২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বুধবার | ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই ফ্যাসিস্ট অলোয়া ভূমি অফিসে কর্মচারী সেজে মানুষের পকেট কাটছে!

স্টাফ রিপোর্টার :
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকুরি না করে পদধারী সরকারি কর্মচারী সেজে প্রতারণার মাধ্যমে পতিত সরকারের দুই ফ্যাসিস্ট সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা(নায়েব) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এহেন অপকর্ম চালানো হচ্ছে।
তারা হচ্ছেন- ভূঞাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি এবং ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের ভাই ও আওয়ামীলীগ নেতা মো. শাখাওয়াত হোসেন বাবু। তারা কেউই ওই ভূমি অফিসের সরকারি কোন কর্মচারী নয়। অথচ সরকারি চাকুরিজীবীদের ন্যায় টেবিল-চেয়ারে বসে ইউনিয়নের জমির পর্চা, খতিয়ান বা নামজারী, খাজনা আদায় সহ অফিসের নানা কাজ করছেন। এসব কাজ করতে তারা ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের জন্য প্রতিদিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করছেন। পরে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, অলোয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের স্টাফ পরিচয়দানকারী জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি অফিসের টেবিল-চেয়ারে বসে ভূমি সংক্রান্ত কাজে আসা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকারি ফি’র বাইরে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার ছোটভাই মো. শাখাওয়াত হোসেন বাবু চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করছেন। তিনি খাজনা আদায়-নামখারিজ সহ নানা সেবা দেওয়ার জন্য গ্রহীতাদের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করছেন।
ওই অফিসের সরকারি কর্মচারী না হয়েও তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে অফিস করছেন। এলাকাবাসী নামজারি/খারিজ অথবা কোন দাগ-খতিয়ানের পর্চা তুলতে এলে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়ে থাকেন। নামজারি/খারিজের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের কাছে গেলে তিনি সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে তাদের স্টাফ জান্নাতুল ফেরদৌস চিনির কাছে পাঠিয়ে দেন। পাশের টেবিলে বসে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি কাগজপত্র দেখে প্রতি নামজারি/খারিজ করতে ব্যক্তি বিশেষ ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। জমির খাজনা দিতে গেলে ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা পাশের টেবিলে কম্পিউটার অপারেটর মো. শাখাওয়াত হোসেন বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। মূলত সেখান থেকেই শুরু হয় অনিয়ম-দুর্নীতির কাজ। কোন জমির অনলাইন খাজনা রশিদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা থাকলেও তারা নিয়ে থাকেন চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা।
স্থানীয়রা জানায়, ভূঞাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামল থেকে বর্তমানেও ওই অফিসে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমান ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন অলোয়া ইউনিয়নে আসার পর থেকেই তার ছোটভাই অফিস করে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, তারা অনলাইনে নামজারির আবেদন করলে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা তাদের কাছে আবেদনের অনলাইন কপি চান। অনলাইন কপি নিয়ে গেলে তিনি জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি ও শাখাওয়াত হোসেন বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে তারা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে বিভিন্ন অযুহাতে নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সুমন মিয়া জানান, বিগত সকারের সময় ভূমি অফিসে কাজ করতে গিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস চিনি ও শাখাওয়াত হোসেন বাবুর দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। সরকার পতনের কয়েক মাস আগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জমি সংক্রান্ত কাজে ভূমি অফিসে গেলে তার কাগজপত্র উপ-সহকারী কর্মকর্তা ছুড়ে ফেলে দেন। পরে বিষয়টি অভ্যন্তরীণ সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়।
ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি অলোয়া ও ফলদা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন। দুইটি অফিসে খাজনা আদায়ের টার্গেট প্রায় ২৫ লাখ টাকা(১২ লাখ+১৩ লাখ)। দুই অফিসে দায়িত্ব পালন করায় কাজের চাপ অনেক বেশি তাই খজনা আদায়ের পোস্টিংয়ের জন্য মো. শাখাওয়াত হোসেন বাবুকে মাঝে মাঝে ডেকে আনা হয়। তাছাড়া জান্নাতুল ফেরদৌস চিনিকে ইতোমধ্যে অফিসে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নে জমি সংক্রান্ত কাজে সরকারি ফি’র বাইরে কোন টাকা নেওয়া হয়না।

অলোয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম হাসান জানান, ভূমি অফিসটি ইউনিয়নের হলেও পরিষদের সঙ্গে অঙ্গিভুত নয়। সেজন্য তেমন খোঁজখবর নেওয়া হয়না। তবে ভূমি অফিসে ইউনিয়নের মানুষের কাজ নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায়ই ঝগড়া-তর্কবিতর্ক হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তরিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. পপি খাতুন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জানতেন না। সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়ার আশ^াস দেন।

|