টাঙ্গাইলে জলাতঙ্ক রোগের র্যাবিস্ ভ্যাকসিন সঙ্কটে ভোগান্তি চরমে
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের বিনামূল্যের র্যাবিস্ ভ্যাকসিন (Rabies vaccine) সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে আগত রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি বিনামূল্যের ভ্যাকসিনের ডোজ হাসপাতাল থেকে পেলেও গত তিন দিন ধরে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা অধিকমূল্যে ওষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে ওই ভ্যাকসিন কিনছেন। হাসপাতালে র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় জলাতঙ্ক রোগীর চাপ বাড়ায় দায়িত্বরতরা ওষুধ বিক্রেতাদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন বলে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ ক্লিনিক ভবনে স্থাপনকৃত জলাতঙ্ক রোগীদের মাঝে র্যাবিস্ ভ্যাকসিন বিতরণ কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ভবন চত্বরে দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সী রোগী ও স্বজনদের ভীর। বিনামূল্যের ভ্যাকসিন না পেয়ে হতাশ আগত রোগী ও স্বজনরা। তাদের কেউ কুকুর বা বিড়ালের কামড় বা আঁচরের শিকার। বিনামূল্যের সরকারি ভ্যাকসিন না থাকার সুযোগে কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ওই ভবন চত্বরেই র্যাবিস্ ভ্যাকসিন(জধনরবং াধপপরহব) বিক্রি করছেন। তারা চারজনের এক একটি গ্রুপ করে একটি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন ও চারটি সিরিঞ্জ প্রকাশ্যে সাড়ে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করছেন। যদিও ওইসব র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের গায়ে সর্বোচ্চ পাঁচশ’ টাকা মূল্য লেখা রয়েছে। প্রতিটা পাঁচ টাকা মূল্যের একটি সিরিঞ্জের দাম নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা।
ভুক্তভোগী ফাতেমা আক্তার জানান, গত ১১ ডিসেম্বর তার দুই বছরের শিশুকে বিড়াল আঁচর(খামচি) কাটে। ১২ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে প্রথম ডোজটি দিয়েছেন। এভাবে তিনটি ডোজ দেওয়ার তারিখ লিখে দেন কর্তব্যরত নার্স। সোমবার(১৬ ডিসেম্বর) তার শিশুর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দিন। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন, র্যাবিস্ ভ্যাকসিন নেই। তিনি বাধ্য হয়ে জনপ্রতি ১৩৫ টাকা করে চারজন মিলে ৫৪০ টাকায় একটি ভ্যাকসিন কিনে চারজন রোগী নিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যের র্যাবিস্ ভ্যাকসিন নেই এটা তিনি বিশ^াস করতে পারছেন না।
রুবী আক্তার নামে অপর এক রোগীর স্বজন জানান, তার রোগীর জন্য তিনি দুটি ডোজ বিনামূল্যে পেয়েছেন। শেষ ডোজ দিতে হাসপাতালে এসে জানতে পারেন- র্যাবিস্ ভ্যাকসিনের সরবরাহ নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে এক ওষুধ বিক্রেতার কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনে তার রোগীকে শেষ ভ্যাকসিনটি দিতে হয়েছে।
তিনি মনে করেন, ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা কমিশন সুবিধা নিতে ভ্যাকসিন না থাকার অজুহাত দিচ্ছেন।
হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম জানান, বরাদ্দকৃত সরকারি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন(জধনরবং াধপপরহব) শেষ হওয়ায় রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। ভবনের বাইরে যিনি ভ্যাকসিন বিক্রি করছেন তিনি হাসপাতালের কেউ নন। তাকে ওই ভবন চত্বরে ভ্যাকসিন বিক্রির অনুমতিও তাকে কেউ দেয়নি। তারা কোনো প্রকার বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন না। দালাল ও বহিরাগত ওষুধ বিক্রেতাদের বিষয়ে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এছাড়া এরআগেও কয়েক দফায় পুলিশের হাতে দালালরা আটকও হয়েছেন।
দায়িত্বরত অপর সিনিয়র স্টাফ নার্স রিজিয়া জানান, এ বছর রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সরবরাহকৃত ভ্যাকসিন সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে ভ্যাকসিনের বাড়তি চাহিদা দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই সরকারি ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আলমগীর হোসেন জানান, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় র্যাবিস্ ভ্যাকসিন(জধনরবং াধপপরহব) বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে তারা যে পরিমাণ ভ্যাকসিনের চাহিদা দেন- তারা সে পরিমাণ ভ্যাকসিন পান না। ফলে মাঝে-মধ্যেই সমস্যা হয়। সরকারি র্যাবিস্ ভ্যাকসিন এলেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আরও জানান, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে দালাল বা কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ওষুধ বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ ওষুধ বা ভ্যাকসিন বিক্রি করে থাকেন তিনি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।