আমার প্রথম ভ্রমণের কিছু স্মৃতি
ভ্রমণ সব সময়ের জন্য আনন্দের! সেটা যেখানেই হোক। এই পযর্ন্ত কয়েকটি জায়গায় ঘুরার সুযোগ হয়েছে।তবে প্রথম ভ্রমণের কিছু স্মৃতি মনের ভিতরে আজীবন থেকে যায়! এরকম একটা স্মৃতি আজকে সবার সাথে ভাগাভাগি করতে চাই। তখন আমি ৬/৭ বছরের বালিকা। বাবা -মার সাথে প্রথম কক্সবাজার ভ্রমণ! বরাবরের মত প্রবল ভাবেই খুশি আমি।
আমার ছোট ফুপু চট্টগ্রামে থাকে।তো ভ্রমনের পরিকল্পনা এভাবে করা হয়েছিল যে প্রথমে আমরা ফুপির বাসায় যাব।তারপর তাদের নিয়ে সবাই একসাথে সমুদ্র দেখতে যাব।ভ্রমণের বনর্ণা করতে গেলে প্রথমে যেটা বলব সেটা হল ট্রেনে চড়া। ঝিকঝিক ট্রেন চলছে এই অনুভূতি সেবারই প্রথম! সকাল এ ট্রেনের টিকিট কাটা হলো। আমি আগেই জানালার পাশের সিট দখল করলাম তাতে আপু একটু মনো:ক্ষুন্ন হলো। একটা বাঁশির শব্দে ট্রেন চলা শুরু করল! আমি টান টান উত্তেজনা নিয়ে বসে আছি, ট্রেন চলছে ……!
ঢাকার কোলাহল ছেড়ে যখন গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ভালো লাগছিল! চারপাশে সবুজ ক্ষেত! নীল আকাশ! যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি! দেখতে দেখতে চট্টগ্রামে পৌঁছেগেলাম। স্টেশনে ফুপা আমাদের অপেক্ষায় ছিলো, তারপর চলে গেলাম তাদের বাসায়।সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর আমরা রাতে সবাই মিলে রওনা হলাম কক্সবাজারের উদ্দেশে! ! আমাদের দলবল ভারি হয়েছে। আমার ফুপাতো ভাই ও যোগ দিয়েছে আমাদের সাথে! তিন ভাই বোন মিলে যাত্রার কোলাহল সর্বদা ধরে রাখলাম।
রাতেই চলে গেলাম, সারাদিনের যাত্রার ধকলে আমরা তখন কাহিল। হোটেল যাবার পর আব্বু আমাদের দুই বোন কে শুয়ে দিলেন! গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছি দুই বোন!!
পরেরদিন সকালএ ঘুম থেকে উঠেই আমি চিৎকার করে বললাম,” আমরা কি চলে এসেছি বাবা”? বাবা হেসে বলল হ্যাঁ মা! আমি আপু আম্মু রেডি হয়ে গেলাম ফুপিদের ডাকতে! তারপর সকালের নাস্তা করে হাঁটতে লাগলাম সমুদ্রের দিকে ……!
বীচে যাবার পর আমাদের আনন্দ যেন শেষ হয় না! প্রথম যেটা হলো, ঢেউ কাছে আসলে আমি ভয় পেয়ে দূরে সরে আসতাম,আবার যখন স্রোতের টান পরতো, তখন আবার তার পিছু পিছু যেতাম!এভাবে চলল কিছুক্ষণ। সমুদ্রে গোসল শেষে এবার ফেরার পালা! হোটেল এ যাবার পথে আম্মু কিছু কেনাকাটা করার জন্য বীচের মাকের্ট এ গেলো। সাথে আমরা টুক টাক জিনিষপত্র দেখছি! একটা জায়গায় অনেক ভিড় দেখে আমি সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি কি হচ্ছে! হঠাৎ ফুপির হাত ধরে বললাম এটা সুন্দর না? খেয়াল হলো উনি ফুপি না!! পিছনে ফিরে দেখলাম কেউ নেই! না আব্বু আম্মু! না ফুপি, আপু!
অনেক দোকানে দেখলাম! না কেউ নেই!এবার শুরু করলাম কান্না! তখন কোন এক আঙ্কেল এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল কেন কাঁদছি? আমি শুধু এটুকুই বলেছি আমি ঢাকায় থাকি আর বাবাকে খুঁজে পাচ্ছি না!
এইদিকে বাবা আপুকে নিয়ে, ফুপি ভাইকে নিয়ে আর আম্মু ভেবেছে আমি বাবার সাথে আছি,এটা ধরে নিয়ে হোটেল পযর্ন্ত চলে গেছে! হঠাৎ বাবাই খেয়াল করল আমি নেই! সাথে সাথে সময় ক্ষেপণ না করে দৌড়ে গেলো বীচের ওখনে!পিছনে সবাই!
স্মৃতি গুলো ধুসর! এটুকুই মনে আছে, অচেনা জায়গায় অচেনা এক আঙ্কেলর হাত ধরে আমি তন্নতন্ন করে সবাইকে খুঁজছি! হয়তো ভরসার হাত পেয়েছিলাম! তিনি আমাকে চকলেট কিনে দিয়েছিলেন। আমি চোখের পানি মুছিতেছি আর চকলেট খাচ্ছি! আঙ্কেল ওখানের সবাই জানাচ্ছে যে আমি হারিয়ে গেছি বা কি করবে?!তখন দূর থেকে দেখলাম আব্বু আসতেছে! আমি আঙ্কেল এর হাত টান দিয়ে বললাম ,”ওইযে বাবা”!
তারপর তো বাবা এসে জড়িয়ে ধরল আর সবাই জানালো সেই আমার বাবা! আমাকে নিয়ে গেলো এটা হয়তো আমার প্রথম হারিয়ে যাবার ও গল্প! মাঝে মাঝে ওই অচেনা আঙ্কেলর কথা মনে! কতটা দূরে গিয়ে পরিচয় ।কিন্ত সে আমাকে তার মেয়ের মতো আগলে রেখেছিলো। বিচিত্র পৃথিবীর কিছু বিচিত্র স্মৃতি